Logo
সংবাদ শিরোনাম :
শমশেরনগর হাসপাতালে দিনব্যাপী চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প আল্পনার সাত রঙে সেজেছে বিটিআরআই সড়ক কমলগঞ্জে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা খালেদা জিয়ার ৮১তম জন্মদিনে যুবদলের দোয়া মাহফিল সিলেটের পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে কমলগঞ্জে বেলা’র প্রচারাভিযান ‘সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া চূড়ান্ত কমলগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মাধবপুর চা বাগান থেকে বৃদ্ধের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার সাংবাদিক তুহিন হত্যা‘র প্রতিবাদে কমলগঞ্জে মানব বন্ধন কমলগঞ্জে গলাকেটে ছাত্রদল নেতাকে হত্যা তীরের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা কমলগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যূত্থান দিবসে আলোচনা সভা কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত । কমলগঞ্জ উপজেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ গঠন দারিদ্রতার বেড়াজালে বন্দী অনন্যার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কমলগঞ্জে যুবতীর আত্মহত্যা সীমাহীন ভোগান্তিতে টমেটো গ্রাম বনগাঁও এর কৃষকরা চিরনিদ্রায় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব.) সাজ্জাদুর রহমান চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে অনিয়মের অভিযোগ বাড়িতে গিয়ে জন্ম সনদ ও শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান

৩০০ বছর ধরে চলছে পাঁচগাঁওয়ের লাল দুর্গার পূজা

রিপোটার : / ১১১ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশিত : শনিবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৩

কমলকন্ঠ ডেস্ক ।।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামের দুর্গাপূজা দেশের অন্য সবখানের চেয়ে আলাদা। কারণ, এখানকার দেবীর রং হয় লাল। পূজা পালনকারীরা জানিয়েছেন, দেশের আর কোথাও দেবী দুর্গার রং লাল বর্ণের নেই। শুধু ভারতের আসাম ও কামাক্ষ্যায় লাল বর্ণের প্রতিমা আছে। পাঁচগাঁওয়ের দেবী ‘জাগ্রত’, তাই এখানে ভক্তদের ভিড়ও বেশি। পূজার সময় এখানে হাজার হাজার সনাতন ধর্মাবলম্বী তাঁদের নানা মানত নিয়ে ছুটে আসেন। কেউ হোমযজ্ঞ দেন, কেউ প্রদীপ ও আগরবাতি জ্বালান। কেউবা পশু বলি দেন। পূজার সপ্তমী ও নবমীতে হাজারখানেক পাঁঠা, ছয়-সাতটি মহিষ, অগণিত হাঁস ও কবুতর বলি দেওয়া হয়ে থাকে।

পাঁচগাঁওয়ের লাল দুর্গার পূজা মূলত একটি পারিবারিক আয়োজন। বর্তমানে এই আয়োজনের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন সঞ্জয় দাস। তিনি পূজা পরিচালনাকারীদের ষষ্ঠ পুরুষ। সর্বানন্দ দাস নামের একজন সাধক পুরুষ এই লাল দুর্গার প্রচলন করেছিলেন।

আয়োজকদের বর্ণনা অনুযায়ী, ঘটনাটি প্রায় ৩০০ বছর আগের। সর্বানন্দ দাস তখন বর্তমান ভারতের আসাম রাজ্যের শিবসাগরে মুন্সি পদে চাকরি করতেন। তিনি একবার আসাম রাজ্যের কামাক্ষ্যাবাড়িতে গেলেন। পূজার জন্য স্থানীয় লোকদের কাছে পাঁচ বছর বয়সের একটি মেয়েকে চাইলেন। লোকজনও তাতে সাড়া দেন, তাঁরা তাঁকে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে এনে দিলেন। সর্বানন্দ দাস সেই মেয়েকে পূজা দিতে শুরু করেন। তাঁর পূজার একপর্যায়ে ধীরে ধীরে মেয়েটির শরীরের রং বদলে লাল হয়ে যায়। বিস্মিত সর্বানন্দ দাস বুঝতে পারেন, মেয়েটির মধ্যে তখন স্বয়ং দেবী ভর করেছেন।

ভক্তরা বিশ্বাস করেন, মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলে, ‘তুমি আমার কাছে বর (আশীর্বাদ) চাও। আমি তোমাকে বর দেব।’ সর্বানন্দ দাস ব্যক্তিগত সম্পদ-প্রাচুর্য চাইলেন না। তিনি মেয়েটির কাছে চাইলেন, প্রতিবছর শারদীয় দুর্গাপূজার সময় স্বয়ং দেবীকে পাঁচগাঁও দুর্গার মণ্ডপে আসতে হবে। পাঁচগাঁও তাঁর জন্মস্থান। মেয়েরূপী দেবী তখন নির্দেশ দিলেন, পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রং হবে লাল। তখন থেকে পাঁচগাঁওয়ে প্রতিমার রং বদলে গেল। ভক্তরা আরও বিশ্বাস করেন, পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়িতে স্বয়ং দেবী অধিষ্ঠান করেন। পাঁচগাঁও দুর্গাবাড়ির প্রতিমা হচ্ছেন জাগ্রত প্রতিমা।

সঞ্জয় দাস প্রথম আলোকে বলেন, বংশানুক্রমিকভাবে তাঁরা এই পূজা পরিচালনা করে আসছেন। ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে তাঁদের বাড়িতে এই ব্যতিক্রমী লাল বর্ণের দেবী দুর্গার পূজা হচ্ছে। তবে ১৯৭১ সালে এই পূজায় ছেদ পড়ে। যুদ্ধপীড়িত দেশটিতে তখন প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা সম্ভব হয়নি। সেবার ঘটে পূজা করা হয়েছিল।

লাল দুর্গার পরিচিতি এখন আর মৌলভীবাজার জেলার সীমানাতেই সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে দেবী দর্শনে সপরিবার দল বেঁধে ছুটে আসেন অনেকেই। অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের কাছে পূজায় পাঁচগাঁওয়ে দেবী দর্শন নিয়মিত কর্মসূচির একটি। শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীরা এখানে ছুটে যান, তা–ও নয়। অন্য ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষও এ উৎসবের কাছে ছুটে আসেন। শারদীয় দুর্গোৎসবে পাঁচগাঁও এক অর্থে মিলনমেলার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পূজার কদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজারো ভক্ত ও সাধারণ দর্শনার্থীর ভিড়ে এলাকাটি সরগরম থাকে। পাঁচগাঁওয়ে যাওয়ার রাস্তা রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কে ছোট–বড় গাড়ির দীর্ঘ জট তৈরি হয়ে যায়। অনেক সময় প্রায় দু-তিন কিলোমিটার দূরেই আটকে যায় গাড়ির চাকা। তখন প্রতিমার কাছে পৌঁছাতে হাঁটা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। তাতেও কারও কোনো ক্লান্তি নেই, বিরক্তি নেই। আয়োজকেরা জানান, পূজার সময় বেশি ভিড় হয় সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিনে। প্রতিদিন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ প্রতিমা দর্শনে আসা-যাওয়া করেন।

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঁচগাঁও পূজামণ্ডপে প্রতিমাশিল্পী তাঁর শেষ কাজটুকু করে নিচ্ছেন। এদিন বেল ষষ্ঠী। সপ্তমী (শনিবার) থেকে পুরোদমে পূজা শুরু হবে। ভক্তের ঢল নামবে পাঁচগাঁওয়ে। মেলার দোকানগুলো ক্রেতাদের টানতে তৈরি হয়ে আছে। টুকটাক কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, দুর্গার মণ্ডপ এলাকার প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে বসছে নানা পসরার মেলা। রাস্তার দুই পাশে কয়েক শ দোকানে রাতদিন চলবে কেনাবেচা। মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি, বাঁশির কান ফাটানো আওয়াজ কিংবা পূজার ঢাকের বাজনা—সব মিলিয়ে পূজার স্থানটি তখন মেলার মতো জমে উঠবে।

সঞ্জয় দাস বলেন, ‘মূলত এটি আমাদের পারিবারিক পূজা। তবে দেবীর জাগ্রত উপস্থিতির কারণে প্রতিবছর প্রতিমা দর্শনে লোকসমাগম বাড়ছে। এ জন্য পূজার এই কদিন হিমশিম খেতে হয়। তবে কোনো সমস্যা হয় না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। এবারও স্থানীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসন থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে।’

বিপ্লবী নেত্রী লীলা নাগের বাড়ি ও একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাঁচগাঁও ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এবং পরিচিত একটি গ্রাম। লাল দুর্গা কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ের এই গ্রামের পরিচিতি আরও ব্যাপক করেছে। পাঁচগাঁও উৎসবের গ্রাম হয়ে ওঠে একসময়। এটি কেবল এই শারদীয়তেই, লাল দুর্গা এলেই।


আরো সংবাদ পড়ুন...
Developed By Radwan Ahmed
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!